সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ০৫:১৪ পূর্বাহ্ন
দৈনিকবিডিনিউজ৩৬০ ডেস্ক : সংসদের বিরোধী দল (জাতীয় পার্টি) আর সরকারি দল একাকার বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এই সংসদে বিরোধী দল আছে কিনা সেই প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘সংসদে আমরা কথা বললে তার কাউন্টার দেয় যাদের আপনারা (সরকার) বিরোধী দলে বসিয়েছেন তারা। বিরোধী দল আর সরকারি দল বাইরে তো একাকার। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিরোধী দলের কোনও প্রার্থী আছে? চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, অন্যান্য জায়গায় মহাজোটের শরিকরা একসঙ্গে ভোট করছে। সংসদের বাইরে এক চরিত্র ভেতরে এসে কি ভিন্ন চরিত্র করা সম্ভব? একসঙ্গে মধ্যরাতে ভোট করলেন। এখন তাদের বিরোধী দলের চেয়ারে বসালেন। এটা কি হয়? কীভাবে সংসদে কার্যকর করবেন। ফরমায়েশি বিরোধী দল দিয়ে সংসদকে কার্যকর করা যাবে না।’
বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বাংলাদেশে কার্যকর কোনও বিরোধী দল নেই। বিরোধী দল ব্যর্থ।’ রাষ্ট্রপতি ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে তাঁর ভাষণে বলেছেন। কিন্তু এই নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক বিরোধ রয়েছে। নির্বাচনটি নিয়ে আদালতে মামলা হয়েছে। এই সংসদের মেয়াদ শেষ হবে, কিন্তু ওই মামলার শুনানি শেষ হবে না।’’
সংসদে সত্য বলতে গেলে সরকারি দল ও মহাজোটের সদস্যরা অসন্তুষ্ট হন। তবে আমি সত্য কথা বলবোই, উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘২০১৮ সালের নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি বলে মহাজোটের শরিক রাশেদ খান মেনন বলেছেন। এখন সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি মির্জা কাদের। তিনি বলেছেন, ‘আজকে নির্বাচন হলে বৃহত্তর নোয়াখালীর যারা এমপি আছেন, তাদের দুই/তিন জন ছাড়া কেউ পালানোর দরজা খুঁজে পাবেন না।’ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালু্কদার বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন অনিয়মের নির্বাচনের মডেল।’ তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি।’ সহিংসতা ও নির্বাচন একসঙ্গে চলতে পারে না।’’
হারুন বলেন, ‘যশোরের এক এমপির ওসির সঙ্গে কথোপকথন ভাইরাল হয়েছে। সরাসরি তিনি ওসিকে থানায় বোমা নিক্ষেপ করতে বলেছেন। মামলা দিতে বলেছেন। চট্টগ্রামে মেজর সিনহা হত্যার পর তদন্ত রিপোর্ট দাখিল হয়েছে। যে রিপোর্ট দাখিল হয়েছে তা উদ্বেগের। সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে এরফান সেলিমের বাড়ি ঘেরাও করে ওয়াকিটকি, মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার করা হলো। কিন্তু তার ফাইনাল তদন্ত রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। র্যাবের ডিজি বলছেন, ‘আমরা যে অভিযোগ দাখিল করেছি তা সত্য।’ আর পুলিশ দিচ্ছে ফাইনাল রিপোর্ট। এগুলো আইনের শাসনের পরিপন্থী।’’
তিনি বলেন, ‘বৈদেশিক রিজার্ভের কথা এই সংসদে বলা হচ্ছে। কিন্তু বিদেশি ঋণ কত? কত লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে, সেই বিষয়গুলো আলোচনার মধ্যে নেই। গণমাধ্যমে দেখলাম, নতুন শিশু জন্ম নিলে ৩০ হাজার টাকার বেশি মাথায় ঋণের বোঝা নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে। লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশ থেকে এনে মেগা প্রকল্প বানানো হচ্ছে। জাতীয় উন্নয়নের নামে জাতীয় লুটপাট হচ্ছে। বিদেশে পাচার হচ্ছে।’
বিএনপির এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। এগুলো দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকার যাকে মনোনয়ন দিচ্ছে, তারাই নির্বাচিত হচ্ছে। নির্বাচন নামে বাংলাদেশে কোনও সংস্কৃতি নেই। নির্বাচনের নামে প্রহসন আর তামাশা হচ্ছে। রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়নের কারণে মূল সংকট আড়াল হয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সরকার এর দায় এড়াতে পারেন না। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, তিনি চোর ধরে চোর হয়ে যাচ্ছেন। তিনি বাস্তব সত্য বলেছেন। দুর্নীতির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার গঠন করে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, দুর্নীতিমুক্ত জনপ্রতিনিধি তৈরি করা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক ও বর্তমান মেয়র একে-অপরের বিরুদ্ধে রাঘববোয়াল আর চুনোপুটির অভিযোগ নিয়ে আসছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন কি এ ব্যাপারে অভিযোগ দায়ের করবে না?’
সংসদে কথা বলতে না দেওয়ার অভিযোগ তুলে বিএনপির এমপি বলেন, ‘সংসদ আজ ১০ দিন হলো চলছে। আমি বহু চেষ্টা করেছি সমসাময়িক কথা বলার জন্য। সব সময় দেখেছি, বিরোধী দলকে অনির্ধারিত আলোচনার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু এ ১০ দিনের মধ্যে ন্যূনতম সুযোগ দেওয়া হয়নি। কথা বলার সুযোগ দেওয়া না হলে সংসদে বিরোধী দল কী কাজ করবে? ৪/৫ ঘণ্টা আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু সমসাময়িক বিষয় নিয়ে ৫/১০ মিনিট আলোচনার স্পেস দিচ্ছেন না।’ এ সময় তিনি স্পিকারকে কার্যপ্রণালী বিধি দেখার অনুরোধও করেন। তিনি বলেন, ‘আমি প্রত্যেক দিন হাত তুলেছি। আপনি বলে দিলেন, সব আলোচনা শেষ হওয়ার পর দেবেন। কাযর্প্রণালী বিধিতে এ ধরনের কিছু নেই।’
স্পিকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘সংসদে বিরোধী দলের কণ্ঠকে স্তব্ধ না করে দিয়ে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। আমাদের স্পেস দিতে হবে। কথা বলার ব্যবস্থা করতে হবে। ভাস্কর্য ও মূর্তি নিয়ে গত দুই মাসে যে উত্তেজনা ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। আলেমদের হাত-পা ভেঙে দেওয়ার মতো যে অশালীন কথাবার্তা বলা হয়েছে, তা নিয়ে সংসদে আলোচনা হওয়া উচিত ছিল।’
হারুনের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘আপনি যতবারই পয়েন্ট অব অর্ডারে সময় চেয়েছেন, আমি না বলিনি। আমি অপেক্ষা করতে বলেছি। বলেছি, আমাদের হাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম রয়েছে, যেগুলো দৈনিক কার্যতালিকার অন্তর্ভুক্ত। আপনি কার্যপ্রণালী বিধি দেখাচ্ছেন, বিধি অনুযায়ী দৈনিক এজেন্ডাভুক্ত বিষয়গুলোকে অবশ্যই প্রাধান্য দিতে হবে। তারপরে আমি অনির্ধারিত আলোচনায় যেতে পারি। কাজেই আপনার কোনও অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়নি। আপনাকে দৈনিক কাজ শেষে যে সুযোগ দিতে চেয়েছিলাম, সেটা আপনি গ্রহণ করেননি। সেটা আপনার বিষয়। আপনি সংসদ অধিবেশনে সারাক্ষণ উপস্থিত থাকতে চাননি। আপনি চলে গেলেন। সেটা আপনার বিষয়। আপনি আমার কথা অনুযায়ী যদি শেষ অবধি থাকতেন, অবশ্যই আমি আপনাকে সময় দিতাম। এবং তাহজিব আলম সিদ্দিকীকে সেইভাবে সুযোগ দিয়েছি।’
স্পিকার বলেন, ‘একটি বিষয় আপনাকে অবশ্যই বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন, এটা কোভিডকালীন সময়। পেনডামিকের মধ্যে সংসদ পরিচালনা করছি। কাজেই এসব বিষয় মাথায় রেখে সীমাবদ্ধতার মধ্যেই সংসদ পরিচালনা করতে হয়। সামগ্রিকভাবে এ বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। ১০ দিন আলোচনার সুযোগ দেওয়া হয়নি বলে যে কথাটি বলেছেন, তা যুক্তিসঙ্গত নয়, গ্রহণযোগ্য নয়।
এসএস